টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - | NCTB BOOK

১৯৪৫ সালের ২৪শে অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘ। সংস্থাটি এখন বিশ্বের ১৯৩টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমাদের পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ রাখা ও সকলে মিলেমিশে কাজ করার প্রয়াসে নিবেদিত। জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্মিলিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ ছিল ২০০০-২০১৫ মেয়াদে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জন। লক্ষ্যগুলোর মধ্যে ছিল- চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা থেকে মুক্তি, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, সর্বক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমতা এনে নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যু হার কমানো, মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। এরই ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ ২০১৫ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ঘোষণা করে, যার ইংরেজি নাম হচ্ছে Sustainable Development Goals (এসডিজি)। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জন এখন আমাদের সময়ের দাবী। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ভিত্তি ছিল এমডিজি অর্জন। বাংলাদেশ এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সাফল্যের ধারাবাহিকতায় এখন এসডিজি অর্জনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এসডিজি'র আরেক নাম ‘আমাদের ধরিত্রীর রূপান্তর: টেকসই উন্নয়ন ২০৩০ এজেন্ডা'। এর মধ্যে ১৭টি অভীষ্ট রয়েছে। পাঠ-১ এ এসডিজি'র বৃত্তলেখ চিত্র থেকে এই অভীষ্টসমূহ জানতে পারবে। আমরা সপ্তম শ্রেণিতে এসডিজি'র উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র সম্পর্কে জেনেছি। এ অধ্যায়ে আমরা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব ও এসডিজি অর্জনে আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানব।

এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
• বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারব;
• টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে করণীয় ব্যাখ্যা করতে পারব;
• টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলোকে ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে টেকসই উন্নয়নের প্রবাহ চিত্র
• অঙ্কন করতে পারব;
• জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে উদ্বুদ্ধ হব ।

Content added By

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়নের গুরুত্ব

পূর্ববর্তী শ্রেণিসমূহে আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) সম্বন্ধে জেনেছি। এসডিজির মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বের সকল দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন ও ভারসাম্য আনয়ন। জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলো একটি সুখী ও সমৃদ্ধ পৃথিবী গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টেকসই উন্নয়নের ১৭টি অভীষ্ট, ১৬৯ টি লক্ষ্যমাত্রা এবং ২৩০টি নির্ধারক স্থির করেছে। মূলত ২০১৬ সাল থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো তাদের নিজ নিজ দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আলোকে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশও এ কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে নেই। খুব গুরুত্বের সাথেই বাংলাদেশ এ অংশীদারিত্বের দায়িত্ব নিয়েছে।

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এনভিজি

আমাদের দেশ ইতোমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এমডিজি অর্জনে সক্ষমতা দেখিয়ে বাংলাদেশ নিম্ন- মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে হলে এসডিজি অর্জন করতে হবে। কোনো অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তনই হলো উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়ন হলো একটি সামগ্রিক ধারণা, যেখানে মানুষের চাহিদা পুরণ করতে প্রাকৃতিক সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হবে, তবে নিঃশেষ হয়ে যাবে না বা ক্ষতি হবে না। উন্নয়নের ফলাফল বিবেচনা করে ক্ষতিকর প্রভাব প্রশমনের জন্য আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। 

যেমন- উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্ষুধা মুক্ত করতে অধিক ফসল ফলানো যেমন জরুরি, তেমনি অধিক ফসল ফলাতে অপরিমিত কীটনাশক-এর ব্যবহার স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এক্ষেত্রে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আনলেও তাকে টেকসই কৃষি উন্নয়ন বলা যাবে না। তাই খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কথা ভাবতে গিয়ে কীটনাশকের ব্যবহার সহনশীল ও পরিমিত পর্যায়ের হতে হবে। সবার জন্য টেকসই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমাদের এমনভাবে কাজ করতে হবে যাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক অসমতা কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। দ্রুত নগরায়ণ প্রক্রিয়ার সাথে সাথে পরিবেশবান্ধব নগরজীবন গড়ে তুলতে হবে।

আমরা সবেমাত্র উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হতে যাচ্ছি। এর জনসংখ্যার তুলনার আয়তন সীমিত। সীমিত আয়তনে বিপুল জনসংখ্যার ভার বহন করতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। এতে জীবন ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ যদি এসডিজি অর্জন করতে সক্ষম হয় তাহলে যে সুফলগুলো আসবে তা হলো-

• সকল পর্যায়ে দরিদ্রতার অবসান হলে সমাজে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমে আসবে। রাষ্ট্র জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা বিধান করতে পারবে।

• টেকসই কৃষি ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে এবং আমরা কর্মঠ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হব। ক্ষুধামুক্ত হয়ে দক্ষ ও সমর্থ জনশক্তিতে পরিণত হব। 

• গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত হলে সকলে সচেতন হবে এবং এই সচেতনতা এদেশের নাগরিকদের বহুমুখী সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে। 

• টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে জেন্ডার সমতা বিধান, সুপেয় পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, জ্বালানি সংকট নিরসনে নবতর উদ্ভাবন, কর্মসংস্থানের সমতা ও সুযোগ সৃষ্টি নিশ্চিত হবে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভারসাম্য আসবে।

• অবকাঠামো বিনির্মাণ, প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সমকক্ষতা অর্জন সহজ হবে। বিশেষ করে জীব-জগতের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

• কাঙ্ক্ষিত নগরায়ণ, উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সুশাসন, বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব এবং সহযোগিতা প্রভৃতি বিষয়গুলো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার পাবে, পাশাপাশি নাগরিকদের বহুমুখী সমস্যা সমাধানে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করা সহজ হবে।

উপরে বর্ণিত সুফলগুলো প্রাপ্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়ন করছে। আর এতে জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থাগুলো সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

 

কাজ-১: টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা পোস্টারে উপস্থাপন করো।

কাজ-২: এসডিজি অর্জনের মাধ্যমেই কেবল বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে'-এই শিরোনামে শ্রেণিতে একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করো।

Content added || updated By

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে করণীয়

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন করতে হলে আমাদের করণীয় কিন্তু কম নয়। আমাদের পরিবেশের অবয়ব মূলত দুইটি। একটি হলো প্রাকৃতিক, অপরটি সামাজিক। প্রাকৃতিক অবয়বই প্রাকৃতিক পরিবেশকে নির্দেশ করে। এর মূল উপাদান হলো- মাটি, পানি, গাছপালা, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী ইত্যাদি। আর সামাজিক অবয়ব সামাজিক পরিবেশকে নির্দেশ করে। এর উপাদান হলো- আমাদের ধর্ম, বর্ণ, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ইত্যাদি যা আমাদেরকে অন্য সমাজ থেকে আলাদা করতে পারে। এজন্য আমাদের উভয় পরিবেশের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে কাজ করতে হবে। এমনভাবে কাজ করতে হবে যেন বিদ্যমান অবস্থাকে সাথে নিয়েই আমাদের উন্নত অবস্থা গড়ে তোলা যায়।

 

টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)

টেকসই উন্নয়নের প্রধান তিনটি ক্ষেত্র হলো- ১. আমাদের পরিবেশ ২. অর্থনীতি ৩. সমাজ। আমরা যদি এ তিনটি ক্ষেত্রকে সবসময় বিবেচনায় রেখে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করি তাহলে সেটি হবে টেকসই উন্নয়ন। তাই টেকসই উন্নয়নের তিনটি ক্ষেত্র নিয়েই আমাদের ভাবতে হবে।

টেকসই উন্নয়নের প্রধান তিনটি ক্ষেত্র

আমরা যদি আমাদের পরিবেশ নিয়ে ভাবি তাহলে প্রথমে আমাদের চিন্তা করতে হবে জলবায়ু নিয়ে । জলবায়ু সম্পর্কে আমরা সপ্তম শ্রেণিতে পড়েছি। বিশ্বের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কী কী হচ্ছে। বাংলাদেশের জলবায়ুর উপর অনুকূল ও প্রতিকূল দুরকম আবহাওয়ারই প্রভাব লক্ষ করা যায়। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে এদেশের মাটি ফসল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আবার অনেক সময় প্রতিকূল আবহাওয়া এদেশের জনজীবনকে বিপন্ন করে; যেমন- ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, কালবৈশাখি, টর্নেডো, অতিবৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহ প্রভৃতি। এসব দুর্যোগ মোকাবিলা করে আমাদের বেঁচে থাকতে হয়। মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, ক্রমাগত প্রযুক্তিনির্ভর উন্নয়ন, ভোগ-বিলাসিতাসহ সভ্যতার অগ্রগতির কারণে জলবায়ু তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এতে পৃথিবীর উষ্ণতা বেড়ে চলেছে এবং গ্রিন হাউজ প্রভাব আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। শুধু তা-ই নয় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। মানুষ ও প্রাণিকুল ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা ঠেকাতে আমাদের পরিবেশ সংরক্ষণের টেকসই প্রযুক্তি খুঁজতে হবে। এজন্য প্রকৃতিকে ধ্বংস করে নয়, বরং তার বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা বার, আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের অন্যতম উৎস বনভূমি। দ্রুত নগরায়ণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে এই বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বাড়িঘর নির্মাণ, আসবাবপত্র ও জ্বালানির সংস্থানে বন উজাড় করা হচ্ছে। গাছ আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে মানবসমাজকে রক্ষা করে। মানুষের নিঃসৃত কার্বন-ডাই-অক্সাইড পাছ গ্রহণ করে প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে। এ কারণে আমাদের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বার্থে গাছকাটার পাশাপাশি বনায়ন অব্যাহত রাখতে হবে।

টেকসই শহর ও সমাজের কথা চিন্তা করলে আমরা কী দেখতে পাই? শহরে বড় বড় দালান কোঠা, প্রয়োজনীয় শিল্প কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এগুলো গড়ে উঠলেই তাকে টেকসই শহর বলা যাবে না। সেখানে সুপরিকল্পিত বনভূমি, সুপের পানি, পরিশুদ্ধ জলাশয়, উক্ত খেলার মাঠ, পার্ক, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ইত্যাদি গড়ে তুলতে হবে। শহরের সমাজব্যবস্থা গ্রামের থেকে ভিন্ন। এখানে মানুষ বিভিন্ন কাজে সারাদিন ব্যস্ত থাকেন। তাই টেকসই শহরে শিশুদের দেখাশুনার জন্য শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং প্রবীণদের সেবাযত্নের জন্য প্রবীণ কল্যাণ কেন্দ্ৰ পড়ে তোলা প্রয়োজন।

কাজ-১ : পরিবেশবান্ধব শহর গড়ে তুলতে হলে আমাদের করণীয় চিহ্নিত করো।

কাজ-২: টেকসই উন্নয়নে আমাদের করণীয় দিকসমূহ তুলে ধরে একটি পোস্টার তৈরি করে উপস্থাপন করো। 

কাজ-৩: টেকসই শহর ও সমাজ টেকসই উন্নয়নের কোন উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত আলোচনা করে বের করো।

আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য বজায়ে জলজ ও স্থলজ প্রাণী সংরক্ষণের উপর জোর দিতে হবে। আমাদের রয়েছে বিশাল বঙ্গোপসাগর। এতে নানা ধরনের জলজ প্রাণী বসবাস করে। এরা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। জলজ সম্পদের প্রধান উৎস হচ্ছে মৎস্যসম্পদ। আমাদের দেশের অনেক ধরনের মাছের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ কারণে মৎস্যসম্পদ বাড়ানোর জন্য এমন কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে যেন আমাদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি তারা বিলুপ্ত হয়ে না যায়। অন্যদিকে বনজ ও গৃহপালিত পশু-পাখি স্থলজ প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। আমরা যদি এদেরকে ক্রমাগত নিধন করি, এদের বংশ বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের কথা না ভাবি, তাহলে পৃথিবী থেকে একদিন এসকল প্রাণী হারিয়ে যাবে। আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই এদেরকে রক্ষা করতে হবে। আমাদের বিশাল ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ক্রমাগত বাঘ নিধনের ফলে সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি একটি বিপজ্জনক সংকেত।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি অপরিহার্য। জীবাশ্মজাত জ্বালানি পরিবেশের অনেক ক্ষতি করে। এক্ষেত্রে কয়লা ও তেল এর ব্যবহার উল্লেখ করা যায়। এগুলোর ব্যাপক ব্যবহারের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন ও জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির সম্মুখীন হচ্ছে। এজন্য আমাদের টেকসই জ্বালানি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। টেকসই জ্বালানি কর্মসূচি গ্রহণ করলে অন্যান্য অভীষ্টগুলোও অর্জিত হবে ; জলবায়ু, শহর ও সমাজ এবং জলজ ও স্থলজ প্রাণী রক্ষা পাবে। সাশ্রয়ী মূল্যে দূষণমুক্ত জ্বালানি প্রাপ্তিতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের একটি প্রবাহ চিত্র নিম্নে দেওয়া হলো:

এইভাবে আমরা সূর্য থেকেও নবায়নযোগ্য সৌর জ্বালানি তৈরি করতে পারি, যা পরিবেশের কোনো ক্ষি করে না।

কাজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রবাহ চিত্র অংকন করো।

এবার আমরা অর্থনৈতিক বিবেচনা প্রসঙ্গে আলোচনা করব। অর্থনৈতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে যেতে হলে আমাদের যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান করা। উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমতা ফিরিয়ে আনা এবং যথাযথ বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভোক্তা তৈরি ও উৎপাদন কৌশল বাস্তবায়ন করা। আর এজন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে ।

কাজ: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের একটি দারিদ্র্য নির্মূলকরণ প্রবাহচিত্র অংকন করো৷

টেকসই উন্নয়ন হলো এমন এক কর্মধারা যেখানে উন্নয়নের সাথে সাথে এর নেতিবাচক দিকগুলো প্রশমনে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় । যেমন জেন্ডার সমস্যা বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত বিষয় । আমরা জানি, আমাদের সমাজে ক্ষমতা ও যোগ্যতায় নারীরা এখনও বেশ পিছিয়ে রয়েছে । এ পিছিয়ে পড়া তার প্রকৃতিগত অযোগ্যতা নয় । এটি শুধু পরিস্থিতিগত অযোগ্যতা । কারণ শারীরিকভাবে নারী ও পুরুষ আলাদা বৈশিষ্ট্যের হলেও সামাজিকভাবে তাদের ক্ষমতা ও যোগ্যতা পুরুষের সমান হতে পারে। এজন্য তাদেরকে অধিক সুযোগ দিয়ে সমতা বিধান করতে হবে। নারীদেরকে যদি যথাযথ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চলাচল, মতপ্রকাশের সুযোগ-সুবিধা দেয়া যায় তাহলে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। টেকসই উন্নয়ন ভাবনায় এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। শুধু নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করে নিজের দেশের কথা ভাবলেই হবে না, অন্যান্য উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সাথে তুলনা করে অপেক্ষাকৃত উন্নত অবস্থানে যেতে লক্ষ্যও স্থির করতে হবে। এতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে অর্থনৈতিক অসমতা কমে আসবে। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে যাতে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষিত হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। জনগণ যাতে সুবিচার থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য দেশের সর্বত্র ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিকতর শক্তিশালী করতে হবে। প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানসমূহের দুর্বলতাসমূহ চিহ্নিত করতে হবে এবং সে দুর্বলতাসমূহ দূরীকরণে প্রয়োজনীয় বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।

কাজ: সামাজিক বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের একটি প্রবাহ চিত্র অংকন করো।

আমাদের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞরা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের গুরুত্বপূর্ণ ৫টি উপাদানকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা বলছেন। এগুলো হলো- জনগণ, ধরিত্রী, সমৃদ্ধি, শান্তি ও অংশীদারিত্ব । আমরা সবাই বিশ্বের সকল ভালো-মন্দ ও উন্নয়নের অংশীদার। বিশ্বের সব ধরনের উন্নয়ন, শান্তি স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।

এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে সবার অংশগ্রহণ অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাধারণ নাগরিক, ছেলে-মেয়ে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে বিশ্বের সকলের অংশগ্রহণে আমরা পাব একটি উন্নত (অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত) পৃথিবী, যা সুন্দর বর্তমানকে টেকসই, সুন্দরতম, নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশ যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা একটি ধারণা মানচিত্রের সাহায্যে দেখানো হলো-

টেকসই উন্নয়নে বাংলাদেশের করণীয়

আমরা এসডিজি অর্জনে কী কী করতে পারি তা জানতে পেরেছি। এখন এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে আমরা দেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

বাড়ির কাজ: বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বের উপর ২০০ শব্দের একটি প্রতিবেদন লেখ।

Content added By
Promotion